সেই বাঁশি
ঋত্বিক প্রিয়দর্শী
“হ্যাঁ, এখন শিলিগুড়িতে। কালকে সকালবেলায় আলিপুরদুয়ারে
পৌঁছব,” বলে ফোনটা কেটে দিলাম।
আমি একজন সাধারণ উকিল। এবার যাচ্ছি আলিপুরদুয়ারে একটা
জরুরি কেসে। ভেবেছিলাম, কেসটা মিটলে তিনদিন লেপচাখা বলে একটা গ্রামে ঢুঁ মেরে আসব।
তিনদিন পর...
“ট্যাক্সি!” বলে ডাকলাম একটা
ট্যাক্সিকে।
লোকটা বলল, “কহা যানা
হ্যায়?”
“সদরবাড়ি।”
“তিন সৌ রুপেয়,” লোকটা জবাব দিল।
“তিনশো টাকা!” মনে মনে ভাবলাম, ‘পাঁচবছর আগেই তো
গেছিলাম সদরবাড়ি আশি টাকায়!’
“সৌ দুঙ্গা বস,” বলতেই গাড়িটা এগোতে লাগল।
“দেড় সৌ নহি দো সৌ দুং...” বলতে বলতে গাড়িটা বেরিয়ে
গেল।
শেষপর্যন্ত একটা অটো ধরে
যেতে হল সদরবাড়ি। জায়গাটা বেশ ভালো মনে হল। পরেরদিন সকালবেলায় এককাপ চা খাওয়ার
পর পিঠে ব্যাগটা তুলে বেরোলাম লেপচাখা যাওয়ার পথে। রাস্তায় যখন উঠছিলাম তখন মনে হল
যে ব্যাগে দুই প্যাকেট ক্রিম বিস্কুট নেওয়া উচিত ছিল।
মেঘগুলো হঠাৎ ডেকে উঠল। আমায় সঙ্কেত দিছিল যে একটু পরে
বৃষ্টি নামবে। ব্যাগ
থেকে বের করে রেনকোটটা গায়ে দিলাম। লেপচাখায় পৌঁছতে লাগল তিনঘন্টা। কিন্তু পৌঁছানোর পর বুঝতে পারলাম
যে না, হাঁটাটা সার্থক হয়েছে।
জামাকাপড় ছেড়ে বেরোলাম
যখন, তখন সূর্যাস্ত হবে হবে করছে। সামনের বেঞ্চে পাদুটো ছড়িয়ে বসে
পাহাড়ের দিকে তাকালাম। সূর্যটা অস্ত যাচ্ছে। আকাশটা হলদে কমলা থেকে আস্তে আস্তে
গাঢ় নীল হয়ে উঠেছে। বাতাসে
একটা ঘুম ঘুম ভাব চলে এসছে।
বাইরের সোলার
ল্যাম্প-পোস্টটা হঠাৎ দপ করে জ্বলে উঠল। বেশি আলো নেই। টিমটিম করে আলোটা জ্বলছে। আমি ঘরে গেলাম।
ল্যাপটপের ঘড়িতে দেখি
এগারোটা বাজে। ল্যাপটপটা
বন্ধ করে যেই কম্বলটা গায়ে দিয়েছি, শুনলাম এক মধুর বাঁশির আওয়াজ। মনে হল যে এত সুন্দর বাঁশির সুর
জীবনে আমি শুনিনি। মনটা
কেমন জড়িয়ে উঠল। মনে
হল, দরজাটা এক্ষুনি খুলে বেরিয়ে যাই আমি। ওই বাঁশির সুরের উৎসের কাছে আমি
ছুটে যাই।
পরেরদিন রাত্তিরেও ওই
আওয়াজটা শুনেছিলাম আমি। কাউকে আর জিজ্ঞেস করিনি।
পরের রাত...
আমার একটা খুব বাজে
স্বভাব আছে ঘুমে হাঁটার। বুঝতে পারছিলাম যে আমি ঘর থেকে বেরিয়েছি। গায়ে শীত লাগছিল। হঠাৎ ঘুম থেকে
উঠে দেখি যে আমি পাহাড়ের একটা অচেনা জায়গায়! পূর্ণিমার রাত, পুরো জঙ্গলটা যেন জেগে
উঠেছে চাঁদের আলোয়। তখন আমি শুনতে পাই সেই মধুর বাঁশির শব্দ। দেখি একটা বাচ্চা
ছেলে সাত-আট বছরের, মুখে
একটা বাঁশি। গরু চরাচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কে, আর এখানে কী করছ?”
সে তার বাঁশি থেকে মুখ না
ঘুরিয়ে একভাবে বাঁশি বাজাতে লাগল মুখে একটা হাসি নিয়ে। চোখ খুলে দেখি কয়েকজন
গ্রামের লোক,
“আপনি ঠিক
আছেন?” আমাকে জিজ্ঞেস করছে।
তারপর যখন আমি লেপচাখা
থেকে বেরবো তখন আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম যে কে ওই ছেলেটা?
ওরা বলল, “দশবছর আগে একটি রাখালছেলে
ছিল। সে
খুব সুন্দর বাঁশি বাজাত। একদিন ও গরু চরিয়ে বাড়ি ফিরছিল, তখন ও একটা ধ্বসে মারা
পড়ে। সেইদিন থেকে রাত্তিরে ওর বাঁশির আওয়াজ সবাই শুনতে পায়।”
_____
অলঙ্করণঃ ঋত্বিক প্রিয়দর্শী
বাহঃ দারুণ গল্প তো ! ঋত্বিকের এর পরের গল্পটা আরো বড় হবে আশা রাখছি।
ReplyDeleteসুন্দর ভাষা এবং সুন্দর প্লট।ভবিষ্যতে আরও গল্পের আশায় রইলাম।
ReplyDeleteKhub sundor lekha. Aro likho.
ReplyDeleteGreat job Bagha da
ReplyDeleteবাহ। খুব ভাল হয়েছে।
ReplyDeleteবাহ। খুব ভাল হয়েছে।
ReplyDeleteদারুণ গল্প
ReplyDelete