আনন্দীবাঈ জোশী
জন্মঃ ৩১শে মার্চ, ১৮৬৫
মৃত্যুঃ ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৭
ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক এবং ভারতীয় নারী যিনি প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা রাখেন।
প্রথম জীবনঃ
আনন্দীবাই ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দের ৩১শে মার্চ ব্রিটিশ ভারতের থানে জেলার অন্তর্গত কল্যাণ গ্রামের এক রক্ষণশীল সমৃদ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গণপতরাও অম্রুতেশ্বর জোশী। শৈশবে তাঁর নাম ছিল যমুনা। ১৮৭৪ খৃষ্টাব্দে মাত্র নয় বছর বয়সে ঊনত্রিশ বছর বয়স্ক বিপত্নীক ডাকবিভাগে কর্মরত গোপালরাও বিনায়ক জোশীর সাথে তাঁর বিবাহ দেওয়া হয়। বিয়ের পর তাঁর নাম রাখা হয় আনন্দী।
গোপালরাও একজন নারীশিক্ষার সমর্থক প্রগতিশীল ব্যক্তি ছিলেন, যা তৎকালীন যুগে ভারতীয় রক্ষণশীল সমাজে খুব একটা সুলভ ব্যাপার ছিল না। গোপাল হরি দেশমুখের 'শত পত্রে' নামক রচনা দ্বারা প্রভাবিত গোপালরাও সংস্কৃত অপেক্ষা ইংরেজি শিক্ষার দিকে বেশি মনোযোগী হন। স্বামীর তত্ত্বাবধানে আনন্দীর শিক্ষালাভ শুরু হয়। কোলাপুরে আনন্দী কিছুদিনের জন্য মিশনারি স্কুলে ভর্তি হলেও সামাজিক বাধায় স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। চৌদ্দ বছর বয়সে আনন্দী এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।কিন্তু মাত্র দশদিনের মধ্যে অপ্রতুল চিকিৎসার কারণে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনার ফলে আনন্দীর মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্র পাঠের ব্যাপারে আগ্রহের সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার প্রস্তুতিঃ

ততদিনে গোপালরাও কলকাতায় বদলি হয়ে গেছেন। কলকাতা শহরে থাকার সময় আনন্দীবাঈয়ের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। থিওডোরা তাঁকে আমেরিকা থেকে ঔষধ প্রেরণের ব্যবস্থা করলেও তা খুব একটা ফলপ্রদ হয়নি। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে গোপালরাও কার্যসূত্রে শ্রীরামপুর শহরে বদলি হলে তিনি ভগ্নস্বাস্থ্য আনন্দীবাঈকে একা আমেরিকা পাঠিয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের ব্যাপারে রাজি করান। থরবর্ন নামক এক চিকিৎসক দম্পতি তাঁকে উইমেন'স মেডিক্যাল কলেজ অব পেনসিলভ্যানিয়াতে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। তৎকালীন রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ আনন্দীর বিদেশযাত্রার বিরোধিতা করে। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকলেও আনন্দীকে তাঁরা ধর্মান্তরিত করতে উৎসাহী ছিলেন। আনন্দীবাঈ শ্রীরামপুর কলেজে একটি সভায় তাঁর আমেরিকা যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ভারতে একজন হিন্দু মহিলা চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি এই সভায় খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত না হওয়ার শপথও নেন। তিনি ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ই এপ্রিল চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য কলকাতা থেকে নিউ ইয়র্ক শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
আমেরিকায় চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষাঃ
১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে আনন্দী নিউ ইয়র্ক পৌঁছন। সেখানে থিওডোরার সাহায্যে তিনি উনিশ বছর বয়সে উইমেন'স মেডিক্যাল কলেজ অব পেনসিলভ্যানিয়াতে ভর্তি হন এবং ঐ কলেজের অধ্যক্ষা র্যাচেল বডলের সাহায্যে একটি বৃত্তি পেয়ে যান। আমেরিকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে, শীতের প্রকোপে ও অপুষ্টিতে কঠিন পরিশ্রম করে আনন্দী যক্ষ্মারোগের কবলে পড়েন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মার্চ আনন্দীবাঈ এমডি ডিগ্রী লাভ করেন। ব্রিটিশ রানি ভিক্টোরিয়া তাঁকে অভিনন্দন-বার্তা পাঠান।
অসুস্থতা ও মৃত্যুঃ
ডিগ্রী লাভের পর কোলাপুর রাজ্যের কিং অ্যালবার্ট এডওয়ার্ড হাসপাতালে যোগ দেবার জন্য আমন্ত্রণ পেলে তিনি দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পরে অসুস্থ অবস্থায় ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই নভেম্বর বোম্বাই ফিরে এসে হাসপাতালে কাজে যোগদান করেন। কাজে যোগদান করার কিছুদিনের মধ্যেই আনন্দী পুনরায় অসুস্থ হয়ে কিং অ্যালবার্ট এডওয়ার্ড হাসপাতালে ভর্তি হলেন। কিন্তু কালাপানি পেরিয়ে আসা জাতিচ্যুত আনন্দীকে তাঁর সহকর্মী এবং অন্যন্য চিকিৎসকেরা চিকিৎসা করতে অস্বীকার করেন। বিনা চিকিৎসায় ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাত দশটায় আনন্দীবাঈয়ের মৃত্যু হয়। তাঁর ভস্মাবশেষ থিওডোরার নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যা তিনি তাঁর পারিবারিক সমাধিতে স্থাপন করেন।
জীবনীঃ
ক্যারোলিন হেলী ডাল ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে আনন্দীবাঈয়ের জীবনী রচনা করেন। শ্রীকৃষ্ণ জনার্দন জোশী আনন্দীবাঈয়ের জীবন নিয়ে 'আনন্দী গোপাল' নামক মারাঠি ভাষায় একটি কাল্পনিক উপন্যাস রচনা করেন, যা আশা দামলে পরবর্তীকালে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন। রাম জোগলেকর এই উপন্যাসের নাট্যরূপ দেন। দূরদর্শন আনন্দীবাঈয়ের জীবনের ওপর আধারিত 'আনন্দী গোপাল' নামক একটি হিন্দি ধারাবাহিক সম্প্রচার করে।
_____
(উইকিপিডিয়া)
No comments:
Post a Comment