গাইড
রাখী নাথ কর্মকার
প্রায় মাসখানেক
নিরলস
অপেক্ষার
পর
বোধহয়
আগামীকাল
শৌনকের
ভাগ্যে
শিকেটা
ছিঁড়তে
চলেছে।
সামনের মাসে টানা এক সপ্তাহ মায়ের অফিসে ক্লায়েন্ট মিটিং। স্বাভাবিকভাবেই মায়ের বাড়ি ফিরতে রাত হবে। তারপর আবার শৌনকের সায়েন্স কোচিং ক্লাসে নাইনের ফাইনাল পরীক্ষার তিনমাস আগে থেকে একঘন্টা করে টাইম বাড়িয়েছেন শশধরস্যার। তাই বহুদিনে
পুষে
রাখা
একটা
ইচ্ছের
কথা
সেদিন
এক
হালকা
মুডে
মায়ের
কাছে
খুলে
বলেই
ফেলেছিল। মা একটু
চিন্তা
করে
বলেছিলেন, “হুঁ, তোর একটা মোবাইল থাকলে আমার অনেকটা সুবিধে হয় বটে। তবে এখনই বেশি দামের কিছু কিনতে যাস না। দু’হাজারের
মধ্যে
যদি
কিছু
পাস, নিতে
পারিস।”
মাত্র দু’হাজার!
একমুহূর্তে ফুটো বেলুনের মতো চুপসে
গিয়েছিল
শৌনক। দু’হাজারে এখন,
এ-বাজারে কী হয়? যত্তসব বাজে মোবাইল, কোনও ভালো ফিচার নেই, কিচ্ছু নেই!
অথচ মায়ের বাজেটের ওপর ওঠার ইচ্ছে বা সাহস ওর কোনওটাই নেই। জানে বাবা মারা যাবার পর থেকে কত কষ্টে মা একা সংসারটাকে দাঁড় করিয়েছে। কক্ষনও ওকে কোনও কষ্ট বুঝতে দেয়নি; ওর কোনও সাধ অপূর্ণ রাখেনি। তাই মায়ের
বাজেটের
সীমারেখার
বাইরে
বেরনোর
কথা
শৌনক
ভাবতেও
পারে
না।
একমাত্র উপায়
ছিল
বিল্টুদা। মোড়ের মাথার
যে
বিশাল, ঝকঝকে
মোবাইলের
দোকানটায়
বিল্টুদা
কাজ
করে
সেখানে
মাঝে
মাঝে
হঠাৎ
কোনও
ভালো
মোবাইল
হাত
ঘুরে
এসে
পড়লে
অনেক
কম
দামে
পাওয়া
যায়। অনেক চুজি পাবলিক আছে যারা মোবাইলের সামান্য খুঁত ধরতে পারলেও তা বিক্রি করে দিয়ে নতুন একটা কিনে নেয়।
বিল্টুদাই
বলেছে, পুরনোপাড়ার
তাতানকাকুর
নতুন
মোবাইলটায়
টাচ-স্ক্রীনে
সামান্য
ঘষা
লেগে
গেছিল, খোলা চোখে যা দেখাই যায় না। তা সত্ত্বেও মহা খুঁতখুঁতে তাতানকাকু জাস্ট গ্যারান্টি পিরিয়ডটা পার হয়ে গেছে বলে প্রায় বারো হাজারের স্মার্টফোনটা নামমাত্র দামে বেচে দিল বিল্টুদাদেরই দোকানে।
প্রায় মাস খানেক আগে থেকেই বিল্টুদাকে ও বলে রেখেছে, ওদের দোকানে ভালো কোনও সেকেন্ড-হ্যান্ড
সেট
এলে
যেন
ওকে
অবশ্যই
জানায়। কোন মোবাইলের
কোনটা
ভালো, কীরকম দাম,
কোনটার
দৌড়
কতদূর - এ
সবই
প্রায়
ওর
কন্ঠস্থ। মোবাইলের প্রতি
ওর
এত
আগ্রহ
আর
কৌতূহল
দেখে
বিল্টুদা
একদিন
ওকে
বলেই
বসেছিল, “পড়াশুনো করে চাকরি-বাকরি না জুটলে আমাদের ব্যবসায় ঢুকে যাস। তোর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।”
গতকালই দেবদূতের মতো ঝলমলে একগাল হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে বিল্টুদা ওকে ডেকে বলেছে, “একটা এসেছে রে, এক্কেবারে নতুন। দারুণ কন্ডিশনে আছে। তোর কথা ভেবে দুই হাজারেই বড়দাকে রাজি করিয়েছি। বড়দা বলেছে দিয়ে দেবে। কাল সকালে
টাকাটা
নিয়ে
আসিস, নিয়ে
যাস।”
আজ সকালে
স্কুলে
যাবার
পথে
প্রায়
নতুন
চকচকে
কালো
স্মার্টফোনটা
হাতের
মুঠোয়
পুরে
শৌনকের
মনে
হল, পুরো
রোমাঞ্চকর
পৃথিবীটাকেই
যেন
হাতের
মুঠোয়
পুরে
ফেলেছে
ও। আহ! ওর এতদিনের
স্বপ্নটা
সার্থক
হল। ঠিকই বলেছিল
বিল্টুদা। ফোনটা এক্কেবারে নতুন। কোত্থাও এতটুকু রং চটেনি, কোনও সমস্যা নেই। শুধু ফোনের পেছনে ক্যামেরাটার কাছে কালচে লাল রঙের দু-তিনটে স্ক্র্যাচ,ব্যস। শুধু এইটুকুর
জন্যই
নাকি
একটা
ছেলে
এসে
বিক্রি
করে
দিয়ে
গেছে
মোবাইলটা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে
দেখেও
মোবাইলটার
আর
কোনও
খুঁত
বার
করতে
পারেনি
শৌনক।
স্কুলে ঢুকেই ও জয়ন্তকে দেখাবে ভেবেছিল মোবাইলটা। একটু দেরি
হয়ে
গেল
বলে
প্রেয়ারের
পরে
পরেই
সোজা
ক্লাসে
ঢুকে
যেতে
হল। জয়ন্ত ওর
বেস্ট
ফ্রেন্ড, একই
ক্লাসে
পড়ে। কিন্তু এবছর রোটেটিংয়ের জন্য ওদের দু’জনের সেকশন আলাদা
হয়ে
গেছে। জয়ন্তের একটা
কম
দামি, কাজ-চলা গোছের ফোন আছে। মাঝে মাঝেই শৌনককে ও বলত, “ধুর, তোর যদি একটা মোবাইল থাকত, তবে বোরিইইইইং বি.আর.স্যারের অঙ্ক-ক্লাসের সময় তোকে টেক্সট মেসেজ পাঠাতে পারতাম, আড্ডা মারতে পারতাম।”
জয়ন্ত এই
মোবাইলটা
দেখলে
এক্কেবারে
ব্যোমকে
যাবে। জয়ন্তরটা একেবারে
পাতি
ছোট্ট
একটা
মোবাইল। ওর দাদা কিছুদিন ব্যবহার করার পর ওকে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু প্রায়
কিছুই
নেই
ওতে। কনট্যাক্ট ইম্পোর্ট
করা
যায়
না, ইন্টারনেট
ব্রাউজ
করা
যায়
না
।
আর
সেই
কারণেই
ও
জয়ন্তকে
কিচ্ছুটি
জানায়নি। ঠিক করে
রেখেছিল, ওর
এই
ঝাঁ
চকচকে
মোবাইলটা
হাতে
নিয়ে
জয়ন্তের
মুখের
ভঙ্গী
কেমন
হয়
সেটা
দেখতেই
হবে। কিন্তু সে
সুযোগটা
বোধহয়
আর
হল
না। কিন্তু তা বলে টিফিন অবধি মোটেই
অপেক্ষা
করা
যাবে
না।
ফার্স্ট পিরিয়ডেই
ওদের
টি.কে.স্যারের
বিরক্তিকর
ইংরেজির
টিকটিকানি। বোরিং ক্লাসের
এক ফাঁকে ক্লাস-ওয়ার্কের খাতার মাঝে মোবাইলটা ঢুকিয়ে নিয়ে চুপি চুপি জয়ন্তকে টেক্সট করতে শুরু করল ও - ‘একটা দারুণ মোবাইল কিনেছি রে আজ। সেটা থেকেই তোকে মেসেজ পাঠাচ্ছি। অঙ্ক-ক্লাসটা শেষ হলে একবার করিডরে আসতে পারবি?’
জয়ন্তর
নাম্বারে
মেসেজটা
সেন্ট
করে
দিয়ে
চনমনে
আগ্রহে
ও
অপেক্ষা
করতে
লাগল
ওদিক
থেকে
কী
মেসেজ
আসে
দেখার
জন্য। কয়েক সেকেন্ডের
মধ্যেই
জয়ন্তর
নাম্বার
থেকে
মেসেজটা
এল - ‘ইংরেজির ক্লাসে স্যারের
চোখকে
ফাঁকি
দিয়ে
মেসেজ
করা
হচ্ছে, হ্যাঁ? সাহস
তো
কম
নয়। আর যেন
এসব
মেসেজ-টেসেজ
পাঠাতে
না
দেখি!’
মেসেজটা পেয়ে
হতভম্ব
হয়ে
গেল
শৌনক। ব্যাপারটা ঠিক
হজম
হল
না
ওর। জয়ন্তের আবার কবে থেকে পাড়ার দাদা থুড়ি স্কুলের মাস্টারমশাইয়ের পদে প্রমোশন হল? মেসেজটা হজম করতে না পেরে আরও কিছু
লিখতে
যাবে
ভাবছিল। কিন্তু টি.কে.স্যার
কটকটিয়ে
এদিকেই
তাকিয়ে
আছেন
দেখে
আর
কিছু
লেখার
সুযোগ
হল
না। মোবাইলটা চুপচাপ পকেটের
মধ্যে
চালান
করে
দিল
শৌনক।
দুপুরে টিফিনের আগে অবধি জয়ন্তর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হল না। মোবাইলটা দেখে জয়ন্তর চোখ যতখানি ছানাবড়া হল,তা থেকেও পাঁচ ইঞ্চি বড়ো হল শৌনকের যখন ওকে জয়ন্ত বলল, ওরকম কোনও মেসেজ ও পায়ওনি,পাঠায়ওনি! আজ সকাল থেকেই নাকি ওর মোবাইলটায় চার্জ নেই। ভোর থেকে
ওদের
ফেজটা
গেছে, তাই
চার্জ
দেওয়ারও
সুযোগ
হয়নি। নির্জীব, প্রাণহীন মোবাইলটা
ঠকঠকিয়ে
ওর
চোখের
সামনে
নাড়িয়ে
জয়ন্ত
বুঝিয়ে
দিল, ও
একবর্ণও
মিথ্যে
বলছে
না।
“তাহলে মেসেজটা কার কাছে গেল? উত্তরটাই বা কে দিল?” শৌনকের এই প্রশ্নের উত্তর জয়ন্তর কাছেও ছিল না। তবে,
“কোনও ক্রশ কানেকশন হয়েছিল বোধহয়,” বলে
জয়ন্ত
কাটিয়ে
দিলেও
শৌনকের
মনের
মধ্যে
থেকে
খচখচানিটা
গেল
না।
জয়ন্ত ছাড়াও ক্লাসের প্রায় প্রত্যেকেরই মোবাইলটা ব্যাপক লেগেছে। “বেশ ভালো দাঁও মেরেছিস,” ইত্যাদি কথাও ভেসে আসছিল বাতাসে। কিন্তু কোথায় যেন উচ্ছ্বাসের সুরটা কেটে গেছে বলে মনে হল শৌনকের।
বাড়ি ফিরে জামাকাপড় বদলে টেবিলের ওপর ঢাকা দিয়ে রেখে যাওয়া মায়ের তৈরি চাউমিনটা খেতে খেতে ওর হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আজ বিকেলে কাঁটাপুকুর মাঠে আসন্ন শিল্ড ফাইনালের জন্য একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ
আছে। কিন্তু তার
আগেই
এই
সপ্তাহে
অঙ্কের
একটা
ক্লাস
টেস্ট
আছে
বলে
মা
পই
পই
করে
বলে
গেছেন, আজকে
খেলতে
না
যেতে। অথচ আজ
না
গেলে
বুড়োদা
ওর
ওপর
বেজায়
ক্ষেপে
যাবেন। শরীর খারাপ
বলে
চালিয়ে
দেওয়া
যায়
অবশ্য। খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয় আজকের খেলাটা। এর পরেও বেশ কয়েকটা ম্যাচ প্র্যাকটিস করা
হবে। কিন্তু...। নাহ্,
মা ফিরে আসার আগেই চটপট বাড়ি ফিরে পড়তে বসে গেলেই হবে, ভেবে উঠে পড়ে ঝটপট বুড়োদাকে একটা মেসেজ করে দিল শৌনক - ‘একটু দেরি
হয়ে
গেল
বুড়োদা, প্লিজ
রাগ
কোরো
না, তবে
আমি
খুব
শিগগিরি
পৌঁছে
যাচ্ছি।’
ড্রেসটা চেঞ্জ
করতে
গিয়েই
মেসেজের
মৃদু
রিংটোনটা
শুনতে
পেল
শৌনক। মোবাইলটা হাতে
নিয়ে
দেখল
বুড়োদার
নাম্বারটা
থেকে
একটা
মেসেজ
এসেছে। ‘দু’দিন পরেই অঙ্কের ক্লাস টেস্ট। অথচ এখন খেলতে যাওয়া হচ্ছে? খেলাটা পরে হবে। কিন্তু অঙ্কে নাম্বার কম পেলে…’
শিরদাঁড়া দিয়ে
একটা
অদ্ভুত
শিরশিরানি
সুড়সুড়িয়ে
নেমে
গেল
নিচে। এবার সত্যি
বেশ
ভয়ই
করতে
লাগল
শৌনকের। কেননা ও
স্পষ্ট
বুঝতে
পারছে, এই
মেসেজটা
বুড়োদার
মোবাইল
থেকে
আসেনি। বুড়োদাকে ফোন
করলেও
বুড়োদা
একই
কথা
বলবে। খেলতে যাওয়ার
ইচ্ছেটা
কেমন
যেন
গুড়গুড়িয়ে
উঠেই
আবার
পেটের
মধ্যে
সেঁধিয়ে
গেল। বিচ্ছিরি একটা
অস্বস্তি
হতে
থাকল
শৌনকের। নাহ্,
খেলাটা
আজ
বন্ধই
থাক। অঙ্কের খাতাটা
খুলে
বসতে
গিয়ে
মনে
পড়ে
গেল, মা
টিফিনে
খাবার
জন্য
পাঁচটা
টাকা
দিয়েছিল। স্কুল থেকে
ফিরে
আসার
সময়
সেটা
দিয়ে
আইসক্রীম
কিনবে
ভেবেও
তালেগোলে
ভুলে
গেছে। একদৌড়ে গিয়ে
মোড়ের
মাথার
দোকানটা
থেকে
আইসক্রীমটা
কিনে
আনলে হয়। কিন্তু জুতোটায় পা গলাতে গিয়েই ওকে প্রায় চমকে দিয়ে টেবিলের ওপর মোবাইলে মেসেজের রিংটোনটা আবার বেজে উঠল।
নাহ্, মেসেজটা
এবার
আর
খুলবেই
না
ঠিক
করে
নিল
শৌনক। একবার ভাবল
মোবাইলটা
সুইচ
অফ
করেই
দেয়। কিন্তু কেন
যেন
সেটা
করতে
গিয়েও
থমকে
গেল
ও। ছোঁ মেরে
মোবাইলটাকে
পকেটে
পুরে
নিয়ে
একদৌড়ে
ও
বেরিয়ে
এল
বাড়ি থেকে। অন্যমনস্কভাবে চারমাথার
মোড়টা
পার
হতে
যাবে, ঠিক
সেই
মুহূর্তে, সেই মুহূর্তেই ওর পকেটের মধ্যে বেশ তীক্ষ্ণ, তীব্র চিৎকার করে মোবাইলের মেসেজ রিংটোনটা বেজে উঠল!
এপারের ফুটপাথেই
থমকে
দাঁড়াল
শৌনক। খানিকটা বিরক্তি
আর
ভয়ের
মিশ্র
অনুভুতিটাকে
ঢোঁক
চেপে
গিলে
নিয়ে
এবার
মোবাইলটা
পকেট
থেকে
বার
করে
হাতে
নিল। কিন্তু মেসেজটা খোলার আগেই ঘটনাটা ঘটে গেল। হঠাৎই ঘন হয়ে নেমে আসা সন্ধের অন্ধকারটাকে প্রচন্ড শব্দে ফালাফালা করে গিয়ে একটা দৈত্যাকার ট্রাক প্রচন্ড গতিতে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল ওর কানের পাশ দিয়ে!
একমুহূর্তের জন্য
ওর
মনে
হল, ওর
শরীরে
যেন
কোনও
সাড়
নেই। আশেপাশে দু-তিনজন
পথচারীর
চিলচিৎকারে
ওর
হুঁশ
ফিরল।
“দেখেছ! মোড়ের মাথাতেও হর্ন না দিয়ে, আলো না জ্বেলে কীভাবে ট্রাকটা হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে গেল!”
মোবাইলের মেসেজটা না এলে এতক্ষণে হয়তো রাস্তার
এককোণে
পড়ে
থাকত
ওর
প্রাণহীন, রক্তাক্ত
দেহটা। ভাবতে গিয়েই
সারা
শরীর
শিউরে
উঠল
ওর। নিজেকে একটু
সামলে
নিয়ে
শৌনক
এবার
মেসেজটা
খুলল। ‘রাস্তায়
বেরোলে
সচেতন
থাকতে
হয়
সবসময়, নইলে
আমার
মতোই
অবস্থা
হয়।’
এইমুহূর্তে একা বাড়ি ফিরে যাবার সাহসটুকুও হচ্ছিল না ওর। এসব অলৌকিক
ব্যাপার-স্যাপারে
একদমই
বিশ্বাস
করে
না
ডাকাবুকো
শৌনক। মা অফিস
থেকে
ফেরা
অবধি বাড়িতে তো ও
একাই
থাকে। কোচিং সেন্টার
থেকে
একা
একাই
তো
ফিরে
এসেছে
কত
রাতে। অথচ আজ
ওর
সমস্ত
বিশ্বাস
যেন
তলানিতে
এসে
ঠেকেছে। নাহ্, মোবাইলটা
এখনই
দোকানে
ফেরত
দিয়ে
আসবে
শৌনক। কিন্তু মোবাইলটার
এই
অদ্ভুত
আচরণের
পেছনে রহস্যটা কী সেটা
জানার
একটা
অদম্য
কৌতূহলও
বুকের
মধ্যে
তিরতির
করে
অশান্তি
পাকিয়ে
চলেছে। কেন জানি
না, ওর
মনে
হচ্ছিল
কেউ
যেন
অলক্ষ্যে
ওকে
সমস্ত
বিপদ
থেকে
রক্ষা
করার
ঠিকেদারি নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কে? বা কেন?
মোবাইলটাই বা কার ছিল?
পায়ে পায়ে
ফুটপাথের
গা
ঘেঁষে
গজিয়ে
ওঠা
গমগমে
দোকানগুলোর
একপাশে
দাঁড়িয়ে
মোবাইলটা
নিয়ে
নাড়াচাড়া
করতে
লাগল
শৌনক। মোবাইলটার সেটিং, অ্যাপ্লিকেশন
সব
চেক
করতে
করতে
গ্যালারিতে
ঢুকল
ও। সারাদিনে ভালো
করে
দেখাই
হয়নি
মোবাইলটা। বেশ চমকে
উঠে
ও
এবার
দেখল, গ্যালারিতে
একটা
রেকর্ডেড
ভিডিও
রয়েছে। একটু অবাক
হল
শৌনক। বিল্টুদার দোকানে
সবই
দেখে
নেওয়া
হয়। কই, বিল্টুদা বলেনি
তো, পুরনো মালিকের কোনও ভিডিও রয়ে গেছে মোবাইলে!
ভিডিওটার প্লে
সুইচটা
অন
করল
শৌনক।
...একটা নির্জন প্রায় অন্ধকার রাস্তা। একজন কেউ হাঁটছে রাস্তার ধার দিয়ে। হঠাৎ পেছন থেকে একটা সজোর ধাক্কা। মোবাইলটা ছিটকে পড়েছে পাশে ঘাসের জঙ্গলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে রাস্তার ওপর রক্তাক্ত একটা শরীর মরণযন্ত্রণায় কুঁকড়ে চলেছে; আর সেই ঘাতক গাড়িটা দূর থেকে দূরে অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে আসা একটা গাড়ির আলোয় ঘাতক গাড়িটার নাম্বার-প্লেটটা দেখতে
পেল
শৌনক। ডব্লিউ বি ফরটি থ্রি ওয়াই নাইন ওয়ান
টু
নাইন।
আরে, এটা তো ওদের পাড়ার প্রমোটার মনোজবাবুর গাড়ির নাম্বার! আর দূরে পড়ে থাকা ঐ রক্তাক্ত নির্জীব শরীরটা 'বৈদ্যপাড়া হাইস্কুল'-এর অঙ্কের টিচার অনুব্রতবাবু না? ওদের পাশের পাড়াতেই থাকতেন ভদ্রলোক। মনোজ-প্রমোটারের সঙ্গে স্কুলের জমিজমা নিয়ে কী একটা
ঝামেলা
যেন
চলছিল
অনেকদিন
ধরেই। অনুব্রতবাবুর নেতৃত্বে
আরও দু-চারজন টিচার
রুখে
দাঁড়িয়েছিলেন। পুরোটা ঠিক
জানে
না
শৌনক। শুধু এটুকু শুনেছিল, গত সপ্তাহে একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে অনুব্রতবাবু মারা যাওয়ার ঠিক পরে পরেই নাকি স্কুলের পেছনের দিকের অনেকটা
জমিতে
পাঁচিল
তুলে
দিয়ে
জবরদখল
করে
নিয়েছে
মনোজ-প্রমোটারের
লোকজন। ওদের সঙ্গে
ফুটবল
খেলে
বিল্টু - ঐ
স্কুলেই
পড়ে। ওর কাছ
থেকেই
পরশু
খেলতে
গিয়ে
কানাঘুষোয়
এসব
কানে
গেছে
শৌনকের।
সন্ধের জমাটবাঁধা আকাশটা
চুমকি
তারার
ঝলমলে
গয়নায়
সেজে
উঠে
কখন
জানি
নেমে
এসেছিল
শৌনকের
চারপাশে। এতক্ষণে মনটা
স্থির
করে
নিয়েছে
শৌনক। মোবাইলটা শক্ত
করে
হাতের
মুঠোয়
ধরে
বৈদ্যপাড়া
থানার
দিকে
পা
চালিয়ে
দিয়েছে
ও। ইতিমধ্যে আড়চোখে
দেখে
নিয়েছে, মোবাইলটার
পেছনে কালচে লাল রঙের ঘষা দাগগুলো মাকড়সার জালের মতো ক্রমে যেন আরও জটিল
হয়ে
শাখাপ্রশাখা
ছড়িয়েই
চলেছে, ছড়িয়েই
চলেছে।
_____
অলঙ্করণঃ দীপিকা মজুমদার
খুব খুব ভালো লাগলো, প্রেডিক্টেবল, কিন্তু লেখনীর গুনে টান টান, সাথে বোন দীপিকার আঁকা, একেবারে যুগলবন্দী
ReplyDeleteখুব খুব ভালো লাগলো, প্রেডিক্টেবল, কিন্তু লেখনীর গুনে টান টান, সাথে বোন দীপিকার আঁকা, একেবারে যুগলবন্দী
ReplyDelete