আধুনিক বীজগণিতের
স্রষ্টা আল-খোয়ারিজমি
গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়
তোমরা অনেকেই হয়তো জানো যে
শূন্য থেকে নয় – এই দশটা সংখ্যা ব্যবহার করে এবং স্থানীয় মান নির্দেশ করে সংখ্যা
লেখার যে পদ্ধতি, তা প্রথম শুরু হয়েছিল আমাদের দেশে। স্থানীয় মান আর কিছু নয় – ধরা
যাক দুই, এই সংখ্যাটা এককের ঘরে থাকলে তার মান দুই, দশকের ঘরে থাকলে তার মান কুড়ি, শতকের ঘরে থাকলে তার মান দু’শো, এইরকম। বিশেষ করে
স্থান রক্ষক হিসাবে শূন্যের ব্যবহার যে ভারতীয়দের
আবিষ্কার, সে কথা আমরা জানি। কিন্তু
ইংরাজি অভিধানে দেখবে একে বলা হয়েছে আরবি (Arabic)
পদ্ধতি। কেন জানো? ভারত থেকে এই পদ্ধতি আরবের বিজ্ঞানীরা আয়ত্ত করেন, আর তাঁদের
থেকে শেখে ইউরোপের লোক। তার আগে ইউরোপে যে কায়দায় সংখ্যা লেখা হত, তাতে বড়ো বড়ো
সংখ্যা লেখা বা তাদের যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ মোটেই
সহজ কাজ ছিল না। কেমন করে রোমানরা যোগ-বিয়োগ
ইত্যাদি করত এখানে দেখতে পার। যে
বই থেকে ইউরোপের বিজ্ঞানীরা ভারতীয় সংখ্যাপাত পদ্ধতি শিখেছিল, তার লেখককে মধ্যযুগের
সেরা গণিতজ্ঞদের মধ্যে রাখা হয়।
তাঁর নাম মহম্মদ ইবন মুসা আল-খোয়ারিজমি। দুটো খুব পরিচিত শব্দ অ্যালজেব্রা (অর্থাৎ
বীজগণিত) এবং অ্যালগরিদম (Algorithm) তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত। অ্যালগরিদম
শব্দটা তোমরা কেউ কেউ নাও জানতে পার, তবে কম্পিউটার-বিজ্ঞানের
দৌলতে আজ শব্দটা যথেষ্ট পরিচিত। এর মানে হল,
কোনও বিশেষ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি। যেমন, দুটি সংখ্যার
গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয়ের জন্য ইউক্লিডের অ্যালগরিদম সঙ্গের ছবিতে দেওয়া হল।
আমরা ছোটোবেলায় এই পদ্ধতি শিখেছি, একে অনুসরণ করে
যেকোনও দুটি সংখ্যার গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক বার করা যায়। বুঝতেই পারছ, একই কাজ বার বার করতে হয় বলে কম্পিউটার
প্রোগ্রামিংয়ের জন্য অ্যালগরিদম খুব সুবিধাজনক।
ইউক্লিডের অ্যালগরিদম
তোমরা
নিশ্চয়ই পিথাগোরাস, ইউক্লিড, আর্কিমিদিস, টলেমি - এই সমস্ত গ্রিক বিজ্ঞানীদের নাম
শুনেছ। বিজ্ঞানে প্রাচীন গ্রিকদের অনেক অবদান আছে। প্রাচীন ভারতবর্ষেও আর্যভাট,
বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্তের মতো বিজ্ঞানীরা
জন্মেছিলেন। কিন্তু খ্রিস্টিয় ষষ্ঠ শতক নাগাদ ইউরোপ বা ভারতে বিজ্ঞানের অগ্রগতি
স্তব্ধ হয়ে আসে। সে সময়ে বিজ্ঞানের পতাকা তুলে নিয়েছিল আরব-সভ্যতা। একটা কথা মনে
রেখ, সমস্ত প্রাচীন গ্রিক বিজ্ঞানী কিন্তু
গ্রিস বলতে আজকাল যে দেশটাকে মানচিত্রে দেখতে পাই, সেখানে থাকতেন না। যেমন ইউক্লিড
বা টলেমি গবেষণা করেছিলেন আলেজান্দ্রিয়াতে। সম্রাট আলেকজান্ডার এই শহরটাকে
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আফ্রিকাতে। আর্কিমিদিস আলেকজান্দ্রিয়াতে পড়াশোনা করেছিলেন।
তিনি থাকতেন সিরাকিউজে যে দ্বীপটা এখন ইতালির সিসিলি অঞ্চলের মধ্যে পড়ে।
তেমনি মধ্যযুগে আরবদেশ বলতে কিন্তু আজকের আরবকে ভাবলে চলবে না। ইসলামের স্বর্ণযুগে
উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ স্পেন, সিসিলি, ভারতের পশ্চিমে সিন্ধু প্রদেশ - এ সবই ছিল
আরব সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। গ্রিক বা ভারতের জ্ঞানবিজ্ঞান থেকে আরব বিজ্ঞানীরা
শিক্ষা নিয়েছিলেন এবং তাকে অনেক জায়গায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে আরব
সাম্রাজ্যের পতনের পরে নবজাগরণ বা রেনেসাঁর সময় ইউরোপ আবার সেই জ্ঞানকে আত্মস্থ
করে। সেই থেকেই আধুনিক যুগের সূচনা। যে আরব বিজ্ঞানীদের কাছে মানবসভ্যতা ঋণী,
তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকবে আল-খোয়ারিজমির নাম।
খোয়ারিজমির
জন্ম সম্ভবত সে যুগের পারস্য আজকের উজবেকিস্তানের খোয়ারিজম প্রদেশে।
সেজন্যই তিনি আল-খোয়ারিজমি পরিচিত হয়েছিল। তাঁর সঠিক জন্ম তারিখ আমরা জানি না, ৭৮০
সাল নাগাদ তাঁর জন্ম হয় বলে ধরে নেওয়া হয়। আনুমানিক ৮৫০ সালে তাঁর মৃত্যু। আরব
খলিফারা জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চাতে উৎসাহ দিতেন, তাঁদের পৃষ্ঠপোষণাতে বহু গ্রিক ও
ভারতীয় গ্রন্থ আরবি ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল। আবাসিদ খলিফারা দামাস্কাস থেকে বাগদাদে
রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন। তারপর প্রায় পাঁচশো বছর বাগদাদই ছিল পৃথিবীর
জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার প্রধান কেন্দ্র। আবাসিদ খলিফাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন
হারুন-অল-রসিদ, তাঁর নাম তোমরা নিশ্চয় জানো। তাঁর ছেলে
খলিফা আল মামুন এক বিরাট গ্রন্থাগার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন। তার নাম ছিল
ব্যাত আল-হিকমা অর্থাৎ জ্ঞানগৃহ। দেশবিদেশ থেকে তাঁর গ্রন্থাগারের জন্য বই আসত। সেগুলির
আরবি ভাষায় অনুবাদও হয়েছিল। এভাবে আল মামুন সহ আরও অনেক খলিফার উৎসাহের জন্যই বহু
গ্রিক বই ইউরোপে হারিয়ে গেলেও আরবে রক্ষা পেয়েছিল। আকাদেমির অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত
ছিলেন সেই যুগের সবচেয়ে বড়ো গণিতবিদ আল-খোয়ারিজমি।
তেহরানের আমীর কবির বিশ্ববিদ্যালয়ে আল-খোয়ারিজমির মূর্তি
খোয়ারিজমি
সম্ভবত ভারতে এসেছিলেন, আল মামুনই তাঁকে পাঠিয়েছিলেন বলে অনুমান করা হয়। ভারতের
গণিত সম্বন্ধে তিনি আরবি ভাষায় একটি বই লিখেছিলেন। মূল বইটি পাওয়া যায়নি কিন্তু তার
লাতিন ভাষার অনুবাদটি পাওয়া গেছে, যার নাম ছিল আলগরিতমি দে নুমেরো ইন্দোরাম অর্থাৎ
আল-খোয়ারিজমি লিখিত হিন্দু সংখ্যা পদ্ধতি। তবে লাতিন ভাষার অনুবাদটি মূলকে
পুরোপুরি অনুসরণ করেনি। সে কারণে কোন ভারতীয় বই থেকে খোয়ারিজমি তাঁর সংখ্যাপদ্ধতি
শিখেছিলেন তা বোঝা যাচ্ছে না। গবেষকদের অনুমান ব্রহ্মগুপ্তের লেখা ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত তিনি
ব্যবহার করেছিলেন। আলগরিতমি হল আল-খোয়ারিজমির নামের লাতিন রূপ, তার থেকেই গণিতে অ্যালগরিদম
শব্দটা এসেছে। সংখ্যাকে স্পেনের ভাষায় বলে গুয়ারিসমো
আর পর্তুগিজ ভাষায়, আলগারিসমো। বুঝতেই পার, এইসব শব্দই আল-খোয়ারিজমির নাম থেকে
এসেছে। এই বই থেকেই ইউরোপীয়রা স্থান রক্ষক হিসাবে শূন্যের ব্যবহার
সহ একক-দশক-শতক এভাবে সংখ্যা লেখার ভারতীয় পদ্ধতি শিখেছিল।
জ্যোতির্বিদ্যার
উপরে খোয়ারিজমি সম্ভবত দুটি বই লিখেছিলেন, সেগুলিও আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। পরবর্তীকালের
লেখকদের আলোচনা থেকে আমরা সে সম্পর্কে জেনেছি। একটি বইয়ের নাম ছিল জিজ-আল-সিন্দহিন্দ। সিন্দ কথাটা এসেছে
সংস্কৃত সিদ্ধান্ত শব্দ থেকে, আর্যভাটের সূর্যসিদ্ধান্ত সহ বহু জ্যোতির্বিদ্যার
সংস্কৃত বইয়ের নামে এই শব্দটা ছিল। আকাশে সূর্য, চাঁদ ও তখনও পর্যন্ত জানা পাঁচটা গ্রহ অর্থাৎ বুধ, শুক্র,
মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনির অবস্থান নির্ণয়ের ভারতীয়
পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন খোয়ারিজমি। গ্রিক জ্যোতির্বিদ্যার সবচেয়ে পরিচিত রূপ পাওয়া যায় টলেমির লেখাতে। খোয়ারিজমি টলেমির তত্ত্বটা নিয়েছিলেন, কিন্তু গণনার জন্য
ভারতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। তাঁর পরবর্তী অনেক বিজ্ঞানী তাঁকে অনুসরণ করেন। এই বইতে সমতল
ত্রিকোণমিতি এবং গোলীয় ত্রিকোণমিতি নিয়েও আলোচনা ছিল এবং বিভিন্ন কোণের সাইন
অনুপাতের মান দেওয়া ছিল।
তবে খোয়ারিজমির কৃতিত্ব শুধু ভারতীয় গ্রন্থের অনুবাদেই সীমাবদ্ধ
নয়। তিনি সবচেয়ে মৌলিক গবেষণার পরিচয় দেন বীজগণিতে, বিশেষ করে সমীকরণের সমাধানে।
আজকে আমরা কোনও রাশির বিভিন্ন ঘাতকে যে বর্গ, ঘন, বর্গমূল এভাবে লিখি, তার জন্য
আমরা খোয়ারিজমির কাছে ঋণী। অবশ্য প্রাচীন গ্রিসে ডায়োফান্টোস
প্রথম এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা
চালু হয়নি। খোয়ারিজমি স্বাধীনভাবেই এই
পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। বীজগণিতে তাঁর প্রভাব এত
বেশি যে তাঁর পরে সকলেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। কেন বীজগণিতে তিনি এত বিখ্যাত হয়েছিলেন?
খোয়ারিজমি বীজগণিতে সমীকরণের সমাধান নিয়ে যে বইটি লেখেন, তার নাম ছিল আল কিতাব আল মুখতাসার ফি হিসাব আল-জেবর ওয়াল-মুকাবেলা। এই বই যখন ইউরোপে অনুবাদ
হয়, তার কিছুদিন পর থেকে বিজ্ঞানীরা বীজগণিতকে
বলতে শুরু করেন অ্যালজেব্রা। বুঝতেই পারছ কোথা থেকে শব্দটা
এসেছে। আল-জেবর আর আল-মুকাবেলা এই
দুটো শব্দ দুটো বীজগণিতের নিয়মকে বোঝাচ্ছে। সমীকরণের একদিক থেকে অন্যদিকে নিয়ে গিয়ে ঋণাত্মক রাশিকে
ধনাত্মক করার পদ্ধতিকে বলে আল-জেবর। যেমন ধরা যাক একটা সমীকরণ, x2 - 5x + 4 = 0, একে x2
+ 4 = 5x রূপে লেখার পদ্ধতির
নাম খোয়ারিজমি দিয়েছিলেন আল-জেবর। তেমনি আল-মুকাবেলা
মানে হল সমীকরণের দুই পাশ থেকে সমান ধনাত্মক সংখ্যার বিয়োগ। অর্থাৎ, x2 +
4 = 3x + 5 কে x2 = 3x + 1 রূপে নিয়ে আসার নাম আল-মুকাবেলা। তাঁর এই বইটিকে আধুনিক বীজগণিতের সূচনা বলে ধরা হয়, কারণ নির্দিষ্ট কোনও সমীকরণ নিয়ে শুরু না
করে খোয়ারিজমি ছয় শ্রেণির সমীকরণের কথা বলেছিলেন। প্রত্যেক শ্রেণির যেকোনও
সমীকরণের সমাধানের জন্য একইরকমের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এই কারণেই সম্ভবত তাঁর নামের
থেকে অ্যালগরিদম কথাটার উৎপত্তি। তবে মনে রেখ, খোয়ারিজমি কিন্তু আমাদের মতো চিহ্ন ব্যবহার
করে সমীকরণ লেখেননি। তাঁর সমাধানের পদ্ধতি
ছিল জ্যামিতি নির্ভর। কেমন করে তিনি সমাধান করতেন, তা জানতে হলে এই লিঙ্কটা
দেখতে পার। প্রাচীন গ্রিস ও ব্যাবিলনে এই জ্যামিতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা
হত। অমূলদ সংখ্যা হচ্ছে এমন সংখ্যা যাদের দুটো পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসাবে লেখা
যায় না। যেমন ধরো, ২ -এই সংখ্যাটার বর্গমূল একটা অমূলদ সংখ্যা। এই সংখ্যারা
গ্রিক গণিতবিদদের এমন সংশয়ে ফেলে যে তাঁরা বীজগণিত ছেড়ে জ্যামিতিক প্রমাণের দিকে
মন দিয়েছিলেন। আল-খোয়ারিজমির সময়েও সম্ভবত অমূলদ সংখ্যায় নিয়ে সেই সংশয় কাটেনি। আমরা
জানি দ্বিঘাত সমীকরণের দুটি সমাধান থাকে, খোয়ারিজমিও তা জানতেন। কিন্তু তিনি কোনও
ঋণাত্মক সমাধানকে হিসাবে আনেননি। আসলে তখনও কিন্তু ঋণাত্মক রাশি সম্পর্কে দ্বিধা গণিতজ্ঞরা
কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
খোয়ারিজমির লেখাতে ত্রিভুজ, বৃত্ত ও সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের
পদ্ধতি পাওয়া যায়। বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের জন্য তিনি পাই(π) নামের যে
ধ্রুবকের দরকার হয়, তিনি তার মান ধরেছিলেন 22/7। আমরা অনেকেই ছোটোবেলায় এই মানটাই নিয়েছি। আসলে পাই কিন্তু
অমূলদ রাশি। তবে সেটা প্রমাণ হতে ১৭৬১ সাল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে
হয়েছিল। জ্যামিতিতে কয়েকটি উপপাদ্য তিনি প্রমাণ করেছিলেন। এছাড়া টলেমির বিখ্যাত জিওগ্রাফি বইতে মধ্য প্রাচ্যের ভূগোলে
অনেক ভুল তথ্য ছিল। সেগুলি সংশোধন করে তিনি লেখেন কিতাব সুরত আল-আর্দ অর্থাৎ
পৃথিবীর আকৃতি সংক্রান্ত পুস্তক। পৃথিবীর মানচিত্র বানানোর
জন্য খলিফা সত্তর জন ভূগোলবিদ নিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন খোয়ারিজমি। যান্ত্রিক ঘড়ি আবিষ্কারের আগে দিনের বেলা সূর্য আর রাত্রিতে
নক্ষত্র দেখে সময় ঠিক করতে হত। বছরের সমস্ত দিনে বা পৃথিবীর সব জায়গায় সূর্য তো
একই কোণে থাকে না। যেমন ধরো, সূর্য বছরে দু’দিন ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর
বিষুবরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়, কিন্তু কর্কটক্রান্তি রেখার উপর ওই দু’দিন সাড়ে
তেইশ ডিগ্রি কোণ করে। আবার অন্য দিনগুলোতে বিষুবরেখার ওপরেও অন্য কোণে আলো দেয়
সূর্য। তাই সূর্য দেখে সময় ঠিক করা সহজ কাজ নয়। সারা বছর পৃথিবীর যেকোনও জায়গায় সূর্যের
উন্নতি কোণ মেপে তার থেকে সময় বার করার জন্য খোয়ারিজমি একটি যন্ত্র বানিয়েছিলেন।
প্রাচীন বৃত্তপাদ (Quadrans vetus) নামের
সেই যন্ত্র মধ্যযুগের জ্যোতির্বিদদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সারা পৃথিবীতে এখন
সম্ভবত তিনটি প্রাচীন বৃত্তপাদের খবর পাওয়া যায়, তার একটিকে লন্ডনের ব্রিটিশ
মিউজিয়ামে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। বুঝেছিলাম যে আকাশে সূর্যের গতি সম্পর্কে খুব
ভালোভাবে না জানলে ঐরকম যন্ত্র বানানো সম্ভব নয়। সূর্যঘড়ি থেকে সহজে সময় নির্ণয়ের
জন্য খোয়ারিজমি একটি সূচি তৈরি করেছিলেন। তিনি কোনও বস্তুর ছায়া থেকে তার উচ্চতা
নির্ণয়ের জন্য শ্যাডো স্কোয়ার নামে একটি যন্ত্র বানিয়েছিলেন। দূরবিন আবিষ্কারের
আগে অ্যাস্ট্রোলেব নামে যে যন্ত্রটি জ্যোতির্বিদ্যাতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হত, তার
পিছনে থাকত একটা শ্যাডো স্কোয়ার।
চাঁদের বুকে আল-খোয়ারিজমি গহ্বর (আলোকচিত্রঃ
নাসা)
বীজগণতের
জনক বললে গ্রিক গণিতবিদ ডায়োফান্টোস ও আল-খোয়ারিজমি, এই দু’জনের নাম সাধারণত
ইতিহাসে থাকে। আধুনিক বীজগণিতের স্রষ্টা খোয়ারিজমিকে আজও আমরা মনে রেখেছি।
চাঁদের উল্টোদিকে, যে পাশটা পৃথিবী থেকে দেখা যায় না, সেই দিকে পঁয়ষট্টি কিলোমিটার
চওড়া একটা গহ্বরের নাম দেওয়া হয়েছে তাঁর নামে। প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ নানা দেশের ডাকটিকিটে তাঁকে স্মরণ
করা হয়েছে।
_____
No comments:
Post a Comment