আড়ষ্টকাঠ
প্রতীক কুমার মুখার্জি
ঘটনা জুন মাসের মাঝামাঝি
সময়কার - যখন চাঁদি ফাটা গরমে পিচ গলা
অবস্থা। ‘ঘটনা’ না ‘দুর্ঘটনা’
বলব ঠিক বুঝতে পারছি না। ওই ভয়ানক বিশ্রী গরমের বিবরণ দিয়ে পাঠককে আর নাই
বা ঘামালাম! আগুনে হলকায়,
প্যাচপেচে ঘামে, কাজে অকাজে ঘরে বাইরে থাকা নানাবয়সের
মানুষের মেজাজ সপ্তমে বিরাজ করে। একটা বেফাঁস কথা মাটিতে পড়ার জো নেই - স্টেপ আউট করে এগিয়ে এসে সোজা মাঠের হাঁকিয়ে দেয় সবাই। এসি বিলাসীদের কথা একটু
আলাদা হলেও, পরিণতি সেই হড়েগড়ে সমান। এসির ভেতরে গালে মাছি পিছলোয়, ফুরফুরে চুল, খোঁপায় ফুল,
সবই ওয়ান্ডারফুল। কিন্তু বেরোলেই দেবশিশু থেকে একেবারে ঘামতেল মাখা
অসুর। তালের
বড়ার মতো তেলতেলে - যাকে বলে
‘গ্ল্যামার গন’! তখন তেনাদের সান্নিধ্য মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত
নয়, তাদের মেজাজই সবার কন্যাদায় হয়ে ওঠে।
তা এরকম এক দিনে পাড়ার দুষ্টু
ছেলের দল যখন মন দিয়ে ফুটবল কাড়াকাড়ি খেলছিল সাহাপুরে একটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টের
গ্রাউন্ড ফ্লোরের পার্কিং লটে, ঠিক
তখনি ‘বি’ উইং-এর
পালবাবু তার গাড়িটি বার করছিলেন অফিস যাওয়ার উদ্দেশ্যে। শ্রী বিনয় কিশোর পাল, শিপিং কর্পোরেশনের অফিসার।
বাড়িতে কিছু একটা অপছন্দের
কারণ ঘটেছিল নিশ্চয়ই, কারণ
‘সফিস্টিকেটেড’ গজগজ করতে করতে নেমে এলেন তিনি। সাধের হন্ডা জ্যাজের দরজা
খুলতেই চোখ পড়ল রাজুদের খেলার দিকে। কিছু বলতে গিয়েও কী ভেবে যেন নিজেকে সামলে গাড়িতে
উঠে পড়লেন তিনি। তিনটি
কথা একসাথে ভাবলেন উনি - এক,
গাড়িটা গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকে, দুই, রাজুদের হাতের ‘টিপ’ এক্কেবারে
শানানো, আর তিন, গাড়ির কাচের দাম প্রচুর।
ঠিক একই সময়ে গটগটিয়ে তার
স্কোডায় এসে চেপে বসে তার ড্রাইভারকে অফিসের দিকে ছুটতে আদেশ দিলেন ‘ই’ উইং-এর মিস্টার
কাঠ। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন - ওঁর পুরো নাম শ্রী
রাজেন্দ্র কাঠ। আদ্যোপান্ত বাঙালি, প্রাইভেট
ব্যাঙ্কের বড়োসাহেব। নিজের বিরল পদবির সাথে ‘জাস্টিস’ করতে ওঁর অভিব্যক্তিগুলো
অনুরূপ - কাঠে কোঁদা শক্ত মুখ, কাঠ কাঠ
ব্যবহার, কাষ্ঠহাসি ইত্যাদি ইত্যাদি। আগের মাসেই এসেছেন নিউ আলিপুরের
এই ফ্ল্যাটবাড়িতে।
এদিকে গজগজানি চাপা পালবাবু
স্টিয়ারিংয়ে, আর ওদিকে ঘন ঘন ঘড়ি
দেখতে থাকা মিঃ কাঠকে নিয়ে দু’জনের গাড়িই সজোরে এগিয়ে এসে রাস্তায়
বেরোতে গিয়ে মেন গেট আর পিলারের মাঝে মুখোমুখি এসে শেষমুহূর্তে ঘ্যাচাং করে ব্রেক কষলো!
ঠিক যেন নাট আর বল্টুর মতো খাপে খাপে জুড়ে গেল দুটো গাড়ি। আরেকটু হলেই রামধাক্কা লাগত।
এমন তেরছাভাবে আটকে গেল
দুটো গাড়ি, যে আগুপিছু করার এক
ইঞ্চি জায়গাও থাকল না। ফলে ফ্ল্যাটের মেন গেট আটকে গেল। ব্রেক কষার বিকট শব্দে রাজুদের
দলটা চমকে উঠে খেলা থামাল। চারদিক যেন হঠাৎ নিস্তব্ধ। এক লহমা পরেই কোনও একটা
গাড়ির হেড লাইটের কাচ ঝনঝন করে ভেঙে পড়ল মাটিতে। তার মানে সংঘর্ষ একটা হয়েছিল। এ-শব্দ যেন রেফারির যুদ্ধ শুরুর বাঁশি বাজানো!
রাজুরা খেলা বন্ধ রেখে পায়ে
পায়ে গুটিগুটি এগোতে লাগল ‘গ্রাউন্ড
জিরোর’ দিকে।
প্রথমেই স্কোডার দরজাটা
অনেক কসরত করে ইঞ্চি আটেক খুলে নামতে পারল মিঃ কাঠের ড্রাইভার, খোকন। মিঃ কাঠ নামতে পারলেন না, আর ওদিকে পালবাবুও নামতে পারলেন না গাড়ি থেকে। ওঁদের দরজাগুলো খোলার বিন্দুমাত্র
উপায় ছিল না। পালবাবু
নিজেই ড্রাইভ করেন, তাই নামতে
না পেরে অগত্যা জানলার কাচ নামিয়ে প্রথম টর্পেডো ছুড়ে দিলেন মিঃ কাঠের ড্রাইভারের দিকে। “কী রে, কবে থেকে গাড়ি চালাচ্ছিস তুই?”
ঠিক সেই সময় মিঃ কাঠের গাড়ির
পেছনের জানালাটা যেন স্লো মোশনে নামতে লাগল।
দু’হাত কোমরে রেখে, একটু বেঁকে তার গাড়ির
ভাঙা হেড লাইটটা একবার সার্ভে করে, এক মুখ পানমশলা মুখের এদিক
থেকে ওদিক ঠেলে সেই খয়াটে খোকন উত্তর ছাড়ল, “তুমি ক’দিন চালাচ্ছ দাদু, কানা হয়ে গেছ নাকি?”
ব্যস, আর যায় কোথায়! আটচল্লিশ বছরের পালবাবুকে
কিনা ‘দাদু’? মাথার মধ্যে লাভার স্রোত ছুটতে
শুরু করল পালবাবুর। তার নামের ‘বিনয়’ আর ‘কিশোর’ খিড়কির দরজা দিয়ে পগারপার!
“অশিক্ষিত জানোয়ার কোথাকার!
ভদ্রভাবে কথা বলতে পারিস না? আমায় দেখে কি তোর
ড্রাইভার মনে হচ্ছে? ছোটোলোক! আমাকে দাদু
বলার সাহস তোকে কে দিল? স্যার বলে কথা বল আমার সাথে!”
তেজী তুবড়ির মতোই জ্বলে উঠলেন পালবাবু। তাঁর গাড়ির আসন তখন এক্কেবারে ‘হট সীট’!
ওদিক থেকে অবিকল কাঠ চেরার
মতো কেঠো শুকনো স্বর ভেসে এল, “ছি
ছি খোকন, তোমার কি বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না? দেখছ না উনি কত আদর করে তোমায় তুই-তোকারি করছেন?
ওঁকে স্যার স্যার করে হাতজোড় করে করে কথা বলবে - ওঁর ডাকনাম হল স্যার। আমার গাড়ির হেড লাইট ভেঙে দিয়েছেন উনি দয়া করে। মাথা নিচু করে কথা বলবে
তো! ভদ্রতা শেখোনি?”
খোকন ব্যাপারটা বুঝতে একটু
সময় নিল। কুড়ি সেকেন্ড
পরে হাততালি দিয়ে অসভ্যের মতো খ্যাঁকখ্যাঁক করে ঘুরে ঘুরে হাসতে শুরু করে তার মনিবকে
স্যাট করে একখানা স্যালুট দিয়ে বসল! ততক্ষণে রাগের চোটে নিঝুম হয়ে গেলেন পালবাবু। তবে তাঁর ভেতরে যে রাগটা আস্তে আস্তে মাথায় চড়ছে, আর রক্তটা গরম হয়ে বইছে, সেটা বেমালুম
মালুম পাচ্ছিলেন তিনি। তার ফোকাস ড্রাইভারের দিক থেকে ঘুরে গিয়েছে স্কোডার
পেছনের সীটের সওয়ারির দিকে।
গলার শির ফুলিয়ে ঝগড়া করা
যায়, তাতে মাথা ঠান্ডা করে পয়েন্ট সাজিয়ে
সাজিয়ে প্রতিপক্ষকে তাতিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু এ যে একেবারে
‘কর্পোরেট লেগ পুলিং’! রীতিমতো স্ক্রিপ্ট লিখে
দেখেশুনে ঝগড়ার ঘরানা! মাত্রা ছাড়িয়ে মরিয়া হয়ে গাড়ির দরজা খোলার
নিষ্ফল প্রচেষ্টা করলেন পালবাবু। তাঁর রাগটা
‘তেলেবেগুনে’ বা ‘দুধ উথলানো’-র স্টেজ বহুক্ষণ পেরিয়ে গেছে।
খিটকেল খোকনের গিটকিরি দেওয়া
হাসি আর স্কোডার পেছনে বসে তাচ্ছিল্যের প্রতিমূর্তি মিঃ কাঠের কেঠো চেহারা পালবাবুকে
নিমেষে পালটে দিল। রাগ, ক্ষোভ, অভিমান আর আক্রোশ প্রায় তাঁকে
কাঁদিয়ে দিল। “একবার আমায় বেরোতে দে,
তারপর আমি দেখে নিচ্ছি কার ডাকনাম কী!”
হাঁফাতে হাঁফাতে সীট বেল্ট
খুলে সামনের সীট টপকে পেছনে এসে দরজা খুলতে সক্ষম হলেন ইঞ্চি দশেক।
পেছনের দরজা খুললেন বটে, কিন্তু তাতে গাড়ির রং চটে গেল খানিকটা। যাক রঙ, কিন্তু এ হেন রংবাজি তো সহ্য করা ক্রিমিনাল অফেন্সের ভেতর
পড়ে। তিনি হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড়
করে হাফ হামাগুড়ি দিয়ে বেরোলেন। সেটা দেখে রাজুর দলের কারও হয়তো হাসি পেয়েছিল, সাথে মিঃ কাঠের ফিচেল ড্রাইভারটারও। কিন্তু পালবাবুর রক্তবর্ণ
মুখ আর চাউনি দেখে সবাই হেঁচকি তুলে থেমে গেল।
তুলকালাম কান্ড হবে এবার। মিঃ কাঠের স্বভাবসিদ্ধ স্মার্টনেসও
কি খানিকটা নাড়া খেয়ে গেল নাকি? নাই
যদি হবে, তবে আগুয়ান পালবাবুকে দেখে তিনিও কেন জুলফির পাশ থেকে
বুড়ো আঙুল দিয়ে ঘাম মুছে ফেলবেন? আর লড়াই সমানে সমানে হবে বুঝেও
খোকন কেন ডিঙি পেড়ে ছয়-সাত পা পিছিয়ে ডিকির কাছে গিয়ে পিক ফেলতে
ব্যস্ত হয়ে পড়ল?
উত্তেজনার বশে কথা আটকে
গেছে পালবাবুর। তিনি সোজা
মিঃ কাঠের জানালার কাছে গিয়ে হাতের ইশারায় ওঁকে নামতে বললেন গাড়ি থেকে। উত্তরে কাঠবাবু উদাসীনভাবে
হাত ঘুরিয়ে জানালার কাচটা আবার তুলে দিলেন পালবাবুর মুখের উপর! অবস্থাটা একবার ভাবুন, কী ভয়ানক পরিস্থিতি!
এত বড়ো অপমান? দিগ্বিদিক ভুলে পালবাবু স্কোডার ল্যাচ খুলে গাড়ির দরজা
খুলে ধরলেন। এবার মারমুখো
তিনি, খুব স্বাভাবিকভাবেই। দরজাটা চার ইঞ্চি ফাঁক হল
মাত্র। কী আশ্চর্য
স্নায়বিক শক্তি মিঃ কাঠের, এই চূড়ান্ত
অবস্থাতেও তিনি একমুখ হেসে পালবাবুকে ‘থ্যাঙ্কস’ (গাড়ির দরজা খুলে দেওয়ার জন্য) বলেই বললেন, “সরি, নামা যাচ্ছে না গাড়ি থেকে। প্লীজ শাট দ্য ডোর।”
এরপর তাদের কথোপকথন যে কতটা
মিঠেকড়া, বা অম্লমধুর - কোন স্তরে হতে পারে তা পাঠকদের বিবেচনার উপরেই ছাড়লাম, কারণ তার বর্ণনা দিতে গেলে গল্প শোনার জন্য কোনও ভদ্রপাঠক বা পাঠিকা অবশিষ্ট
থাকবেন না। তাই আমি
আবার ঘটনায় ফিরছি এমন একটা সময়ে, যখন
দুই যুযুধান পুরুষকে ঘিরে ফ্ল্যাটের প্রায় সব মানুষ জড়ো হয়ে গেছেন, খোকন ভাগলবা, এমনকি রাজুরাও পাড়া থেকে কিছু ‘ব্রাইট প্রস্পেক্ট’ কে এনে হাই সোসাইটির ঝগড়ার ফ্রি ডেমো
নিচ্ছে।
ঝগড়ায় প্রায় সব টপিক কভার
হয়ে গেছে - পরিবার, পদমর্যাদা, খুঁটির জোর, স্ট্যাটাস,
সম্পত্তি, সন্তানদের এডুকেশন, ডোনেশন, বিদেশভ্রমণ, ক্লাব,
এমনকি টিভির মাপ, ফ্রিজের স্পেক্স, গাড়ির ভ্যালু, আরোও সমস্ত হাস্যকর স্ট্যাটিস্টিকস। এই ঝগড়ায় হাজির হয়েছেন বাবুদের
মিসেসরা, কিন্তু তারাও তাদের কত্তাদের বাক্যবিন্যাসের
তাপ পোহাচ্ছেন সানন্দে।
ভিড়ের ভেতর থেকে রসিক কেউ
একজন আওয়াজ দিলেন, “দারুণ
জমেছে, চ্যালাকাঠ দিয়ে শিশুপাল বধ - লেগে
থাক, নারদ নারদ!”
কিন্তু একটাও হাততালি পড়ল
না। হয় কেউ
মন দেয়নি, নয় মাথার উপর দিয়ে গেছে দর্শকমণ্ডলীর।
ঠিক এই সময়ে ঘটল এক সাংঘাতিক
ছন্দপতন, ম্যাডাম কাঠ আর পালগিন্নির চোখাচোখি
হয়ে গেল! দুটো মুখের উপর দিয়ে একসাথে অনেক রঙ, অনেকগুলো অভিব্যক্তি বয়ে গেল। মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও বিফল হল একাধিকবার। দু’জনের চোখ একে অপরের উপর এমনভাবে আটকে যেতে লাগল বারংবার,
ঠিক যেন মাছরাঙার মুখে পুঁটিমাছ!
কত্তাদের টক্কর প্রায় কুস্তাকুস্তির
জায়গায় চলে গেছে। তা সত্ত্বেও
মরিয়া একটি মহিলা কন্ঠস্বর ঝগড়া ছাপিয়ে বেজে উঠল,
“আপ... ইয়ে মানে তুমি... আচ্ছা, তুই টুম্পা না?”
পালগিন্নির এনকোয়ারি আছড়ে
পড়ল ম্যাডাম কাঠের প্রতি।
ঠিক সাত মিনিটের মাথায় ঝগড়া, সমস্ত ঘটনার কুশীলব, তাদের সমস্ত
অডিয়েন্স হাওয়ায় মিলিয়ে গেল! এমনকি আধঘন্টার ভেতর দুটো বদখতভাবে
আটকে থাকা গাড়িও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কেমন করে জানি না পাশাপাশি পার্ক হয়ে গেল!
অত্যুৎসাহী জনতার আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা হল না - কেউ বুঝলই না, কীভাবে গোছানো খাবারটা পাতেই ঠান্ডা হয়ে
গেল।
টুম্পা, অর্থাৎ ম্যাডাম কাঠ আর মিনি, ওরফে
পালগিন্নি এক্কেবারে যাকে বলে শিশুবয়সের বন্ধু। মাঝে দু’জনের বিয়ে আলাদা আলাদা জায়গায় হওয়াতে বন্ধন ছিন্ন হয়েছিল। রাজস্থান থেকে একমাস আগে
মিঃ কাঠরা ফ্ল্যাটে আসা ইস্তক দু’জনের
দেখা হয়নি। দুই সই
আলাদা ডানায়, থুড়ি উইং-এ একাকীত্ব সইতেন। আজ যে পরিস্থিতিতে দেখা হল তা আশাতীত - একেবারে হট ফ্রাইং প্যান থেকে সুস্বাদু কেক মিক্স!
অফিস তো সেদিনকার মতো জলাঞ্জলি। আর মধুর রিইউনিয়ানকে আরও
স্মরণীয় করে রাখতে সেদিন কাঠ আর পাল পরিবার একত্রে কলকাতার নামকরা এক রেস্তোরাঁয় লেট
লাঞ্চ সেরে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরলেন। বিকেল থেকে আর বোঝাই গেল না যে দুটো পরিবারের মানুষদের
এতদিন বাদে দেখা হয়েছে।
পরদিন সকালে দেখা গেল, মিঃ কাঠ আর পালবাবু একজনের গাড়িতেই অফিস যাবেন। ইয়ার্কি মারতে মারতে বেরোলেন
দু’জনেই। রাতারাতি দু’জন দু’জনের নতুন নামকরণ সেরে ফেলেছেন। পালবাবু হয়েছেন ‘পঙ্গপাল’, আর পালবাবু বলছেন,
“রাজেন ভায়া, তুমি অ্যারিস্টোক্রাটিক লোক,
তাই তোমায় আজ থেকে আমি ‘আড়ষ্টকাঠ’ বলেই ডাকব।”
গাড়িতে চেপে বসতেই দেখা
গেল খৈনি ডলতে ডলতে খোকন ড্রাইভার গেট খুলে ঢুকছে। গতকালের ঝগড়ার পরিণতি তার অজানা। বাজখাঁই গলায় হেঁকে উঠলেন
মিঃ আড়ষ্টকাঠ, “এই যে খোকনবাবু,
এদিকে আসেন।”
সে গাড়ির কাছে এসে দুই মূর্তিকে
একসাথে দেখে হতবাক হয়ে দাঁড়াতেই দুটো দু’হাজার টাকার নোট তার হাতে ধরিয়ে দিলেন মিঃ কাঠ।
পালবাবু একগাল হেসে বললেন, “নাতিসাহেব, কাল থেকে তুমি অন্য বাগানে
ফুল হয়ে ফুটো। এখন কর্পূর হও দিকি বাপু!”
হন্ডা জ্যাজ হুশ করে একরাশ
ধোঁয়া ছেড়ে ফ্ল্যাটের মেন গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল।
এক হাতে ডলা খৈনি আর এক
হাতে দুটো দু’হাজারের নোট নিয়ে দাঁড়িয়ে
থাকা হতভম্ব খোকনের মুখ দিয়ে ক’টা কথা বেরিয়ে হাওয়ার মিলিয়ে গেল,
“লে হালুয়া! কানেকশনটা কে দিল গুরু... উল্টে গেল চোখের ভুরু!”
_____
মধুরেণসমাপয়েৎ। শুধু বেচারা খোকনের চাকরি টা গেল বলে একটু মনখারাপ হল।
ReplyDelete