২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর জীবনবিজ্ঞানের গবেষণায় একটি চমকপ্রদ তথ্য আবিষ্কৃত হয়। প্রাণীজগতে এমন কিছু প্রাণী আছে, যারা বিপদকালে প্রয়োজনীয়তা বুঝে তাদের দলের অন্যান্য সদস্যদের সতর্কবার্তা প্রেরণ করে। গবেষকদের মতে ক্রিস্টেড পায়রা সম্পূর্ণ নন-ভোকাল পদ্ধতিতে অত্যাশ্চর্য বিষয়টি ঘটাতে সক্ষম। উড়ানে সাহায্যকারী প্রধান পালকটির দ্বারা তারা বিপদের সময় একটি তীক্ষ্ণ শব্দ সৃষ্টি করে আশেপাশের অন্যান্য উড়ন্ত পাখিদের সতর্ক করে দেয় যাতে যেকোনও আক্রমণের হাত থেকে তারা সহজেই পালাতে সমর্থ হয়। নির্দিষ্ট তীব্রতায় এই শব্দের মাত্রা ক্রমশই বাড়তে থাকে। রিসার্চে দেখা যায় যে বিপদের সম্ভাবনা দেখলেই ক্রিস্টেড পায়রারা সিগনাল উৎপত্তি ঘটিয়ে উড়ে পালায়। এই শব্দ উড়ানের ফলে উৎপন্ন কোনও বিশেষ শব্দ নয়, বিপদ বুঝলে তবেই এ-শব্দের উৎপত্তি ঘটে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রভার মারে বলেছেন, ক্রিস্টেড পায়রা যে শব্দ উৎপাদন করে তাদের গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের বিপদসংকেত প্রেরণ করে তা কোনও কন্ঠস্বর দ্বারা সৃষ্ট নয়, সম্পূর্ণ উড্ডয়নে সাহায্যকারী পালক দ্বারা সৃষ্ট।
প্রায় একশো পঞ্চাশ বছর আগে চার্লস ডারউইন পাখিদের এরূপ নন-ভোকাল যন্ত্র সম্বন্ধে একটি মতবাদ প্রদান করেন। কিন্তু সে সময়ে এ-বিষয়ে বিশেষ পরীক্ষানিরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে এ তথ্য বিজ্ঞানীদের অবগত ছিল যে, ক্রিস্টেড পায়রার উড্ডয়নকালে এক বিশেষ ধরনের শব্দ উৎপাদন হয়। এই কারণে এদের হুইসিল উইংন্ড পিজিয়নও বলা হয়। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ল্যাবের প্রধান রবার্ট মার্গারেট প্রথম আবিষ্কার করেন যে অন্যান্য পায়রাগুলি এই শব্দের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দান করে।
পালক অপসারণ পরীক্ষা ও হাই স্পিড ভিডিওগ্রাফির দ্বারা বর্তমান গবেষণায় নিশ্চিতরূপে বলা যায় যে এই পায়রাদের হুইসলিং পালকটি আসলে বিপদকালীন অ্যালার্ম হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
এই গবেষণায় দেখায় উড্ডয়নে সাহায্যকারী অদ্ভুত অষ্টম পালকটি, প্রতিটি ডাউন স্ট্রোকের সাথে একটি আলাদা নোড তৈরি করে। পাখিটি দ্রুতগতিতে উড়ার সাথে সাথে শব্দটিও পরিবর্তিত হয়। ভয়ংকর বিপদগ্রস্তদের সাবধান করার জন্য শব্দটি ক্রমশ উচ্চতর ও তীব্র হতে থাকে।
এই পায়রাগুলি সাধারণত উড়ানের সময় উচ্চ ও নিম্ন তীব্রতায় শব্দ সৃষ্টি করতে পারে। গবেষকরা পরীক্ষায় দেখিয়েছেন যে উচ্চ নোডগুলির জন্য অষ্টম উড্ডয়ন প্রাইমারী পালকটি ও নিম্ন নোডের জন্য নবম প্রাইমারী পালকটি প্রধানত দায়ী। কিন্তু প্লে ব্ল্যাক পরীক্ষায় দেখানো হয়েছে কেবলমাত্র উচ্চ মোডের শব্দটিকেই বিপদকালীন অ্যালার্ম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
যখন গবেষকরা অন্যান্য অনেকগুলি পায়রাদের এই সাংকেতিক শব্দ নিয়ে অনুসন্ধান করতে শুরু করেন, তারা দেখেন যে, অষ্টম প্রাইমারি উড্ডয়ন পালক দ্বারা সৃষ্ট শব্দ শুনে তাদের পালাবার প্রবণতা অনেক বেশি ছিল। অপরদিকে অষ্টম পালকটি অপসারিত করলেই তারা পরস্পরের দিকে বা এদিক ওদিক তাকাতে শুরু করে।
মুরের মতে, এই বিপদকালীন সাংকেতিক শব্দটি স্বনির্ধারিত একটি সিগনাল বিশেষ। কারণ পায়রারা শিকারির হাত থেকে বাঁচতে খুব দ্রুততায় উড়ে পালায়, ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ কম্পাঙ্কের সিগনাল শব্দটি সৃষ্টি হয়।
তবে ক্রিস্টেড পায়রাই শুধুমাত্র উচ্চ শব্দ উৎপাদী একমাত্র পরিচিত পাখি নয়। গবেষকরা দেখেছেন, হামিংবার্ডস এবং ম্যানিকিনিস পাখিরাও তাদের উইং শব্দগুলির জন্য সুপরিচিত। তারা আশা করে যে, ভবিষ্যতের গবেষণায় অন্যান্য পাখি প্রজাতির মধ্যে উইং শব্দের যুগান্তকারী আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।
_____
Darun
ReplyDelete