কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
ষষ্ঠ পর্ব
শুক্র গ্রহে বছর ছোটো, দিন বড়ো কেন?
কোনো গ্রহের বছর ও দিনের পরিমাপ নির্ভর করে গ্রহটির যথাক্রমে সূর্যের চারপাশে এবং নিজের অক্ষের চারপাশে এক পাক ঘোরার সময়ের উপর। আমাদের গ্রহ অর্থাৎ পৃথিবী নিজের অক্ষের চারপাশে পাক খেতে সময় নেয় প্রায় ২৪ ঘণ্টা, বৃহস্পতির লাগে মাত্র ১০ ঘণ্টা (পৃথিবীর সময়ের হিসেবে)। তাই পৃথিবীর দিন হয় ২৪ ঘণ্টায় আর বৃহস্পতির দিন হয় ১০ ঘণ্টায়। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে প্রায় ৩৬৫ দিন, বৃহস্পতি নেয় ১১.৮৬ পার্থিব বছর। অতএব পৃথিবীর বছর ৩৬৫ দিনে আর বৃহস্পতির ১১.৮৬ পার্থিব বছরে। এবারে দেখা যাক শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রে কী হচ্ছে। শুক্র পৃথিবী থেকে সামান্য ছোটো হওয়া সত্ত্বেও সে তার নিজের অক্ষের সাপেক্ষে এত আস্তে আস্তে পাক খায় যে একটা পাক সম্পূর্ণ করতে আমাদের হিসেবে নিয়ে নেয় প্রায় ২৪৩ দিন (প্রায় ৮ মাস)। তাই শুক্রের ১ দিন পৃথিবীর ২৪৩ দিনের সমান। কিন্তু এর মধ্যে ২২৪ দিনে গ্রহটি সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে ফেলে। ফলে তার বছরের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ২২৪ দিনে, যদি পৃথিবীর দিনের মাপে হিসেব করা যায়। তাই শুক্র গ্রহে বছর ছোটো, আর দিন বড়ো।
তারারা ঝিকমিক করে কেন?
সন্ধ্যা হয়ে এলেই আকাশ সেজে ওঠে তারার মালায়। হিরের কুচির মতো তারাগুলি ঝিকমিক করতে থাকে। সত্যিই কি এরা ঝিকমিক করে? এর উত্তর পাওয়া যাবে সূর্যের দিকে তাকালে। কারণ সূর্যও একটা তারা। কিন্তু সূর্যের দিকে তো তাকানো যায় না। তাহলে তাকাব কীভাবে? সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় খালি চোখে সূর্যকে দেখা যায়। সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গিয়ে অনেকেই দেখেন। যদিও সেটা প্রকৃত সূর্য নয়, সূর্যের প্রতিবিম্ব মাত্র। তখন দেখলে বোঝা যাবে যে সূর্য আদৌ ঝিকমিক করে না, তারাগুলোও করে না। সূর্যের আলোর মতোই ওদের আলোও খুব জোরালো আর স্থির। দেখা আর প্রকৃত ঘটনার মধ্যে মিল না থাকায় মন যেন মানতে চায় না, তাই না? আসলে তারাগুলো আকাশে আছে আমাদের থেকে বহু দূরে। সেখান থেকে দীপ্যমান আলো বেরিয়ে সরল পথেই পৃথিবীর দিকে আসতে থাকে। বহু আলোকবর্ষ পথ পেরিয়ে সেই আলো আমাদের চোখে এসে পড়ার আগে যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখনই যত কাণ্ড ঘটে।
দূরের তারাগুলো থেকে আসা আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যখন প্রবেশ করে তখন সেটা লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করে। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মানুসারে প্রত্যেকটা আলোর রশ্মিই প্রতিসরিত হয়। পৃথিবীকে ঘিরে যে বায়ুমণ্ডল আছে তা সর্বত্র সমান ঘন নয়, তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলের চাপের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। এর ফলে তারা থেকে আসা আলোর রশ্মির গতিপথের অনবরত পরিবর্তন ঘটে। তাই আমরা দূর আকাশে তারাদের ঝিকমিক করতে দেখি।
কোন পাখি তার নিজের ওজনের তুলনায় বেশি ওজনের ডিম পাড়ে?
বড়ো আকারের পাখিদের মধ্যে অস্ট্রিচ (Ostrich) অন্যতম। এদের ডিমও পেল্লায় বড়ো। স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, এদের ডিমের ওজন যেকোনও পাখির ডিমের ওজনের তুলনায় বেশি। একথা ঠিক। তবে পাখিটির নিজের ওজনের সঙ্গে তার ডিমের ওজন তুলনা করলে একটি ছোট্ট পাখির কাছে হেরে যাবে। একটি মেয়ে অস্ট্রিচ পাখির ওজন সাধারণত ১৪০ কিলোগ্রামের মতো হয়। আর পাখিটির ডিমের ওজন হয় ১.৪ কিলোগ্রামের মতো। শতকরা হিসাবে ডিমের ওজন পাখিটির নিজের ওজনের মাত্র ১ শতাংশ। নিউজিল্যান্ডের কিউই (Kiwi) পাখি আকারে মুরগির মতো। অস্ট্রিচ পাখির সঙ্গে ওজনের কোনও তুলনাই চলে না। একটি মেয়ে কিউই-র ওজন সাধারণত ১.৮ কিলোগ্রামের মতো হয়ে থাকে। এরা যে ডিম পাড়ে তার গড় ওজন ০.৪৫০ কিলোগ্রাম। শতকরা হিসাবে পাখিটির ওজনের সঙ্গে ডিমের ওজন দাঁড়ায় ২৫ শতাংশ। অতএব বলা যায়, পাখির নিজের ওজনের সঙ্গে তার ডিমের তুলনামুলক হিসাব করলে ছোট্ট কিউই বিশাল অস্ট্রিচকে বোল্ড আউট করে দেবে।
চুল পাকে কেন?
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চুলে পাক ধরে। ধীরে ধীরে সব চুলই সাদা হয়ে যায়। এমনটা হওয়ার কারণ চুলের কোষে রঞ্জক পদার্থের উৎপাদন কমে যাওয়া। আমাদের শরীরে কেরাটিনোসাইটস কেরাটিন প্রস্তুত করে। কেরাটিন হচ্ছে একধরনের প্রোটিন কোষ যা আমাদের চুল, চামড়া আর নখ গঠন করে এবং স্বাস্থ্যবান রাখে। চুলের এই কেরাটিনকে আবার রঙ সরবরাহ করে মেলানিন নামে একধরনের রঞ্জক পদার্থ। এই মেলানিনের কারণে চুলের রঙ কালো হয়। গায়ের রঙ কেমন হবে তাও নির্ভর করে এই রঞ্জক পদার্থটির উপর। মেলানিন যার শরীরে যত বেশি থাকে সে তত কালো হয়, আর যার যত কম থাকে সে তত ফরসা হয়।
চুল মূলত দু’ভাগে ভাগ করা যায়—শ্যাফট এবং রুট। শ্যাফট আমাদের মাথার খুলি বা শরীরের ত্বকের উপরে থাকে। আর রুট হল চুলের নিচের অংশ অর্থাৎ খুলি বা ত্বকের সঙ্গে যে অংশটি যুক্ত থাকে। মূলত চুলের শ্যাফট অংশটিই কালো বা অন্যান্য রঙের হয়ে থাকে। প্রতিটি চুলের রুট ত্বকের নিচে একটি টিউবে যুক্ত থাকে। এই টিউবকে বলা হয় হেয়ার ফসিল। হেয়ার ফসিলের অভ্যন্তরে মেলানোসাইটস নামক কোষ থাকে। এই কোষ থেকেই মেলানিনের উৎপত্তি। এটি আমাদের সারা শরীরেই আছে। যে প্রক্রিয়ায় মেলানিন উৎপাদিত হয় তাকে মেলানোজেনেসিস বলে। মূলত দুই ধরনের মেলানিন রয়েছে— ইউমেলানিন যা চুলের রঙ কালো হতে সাহায্য করে, আর ফিওমেলানিন যা হলুদাভ রঙের জন্য দায়ী। এই দুই প্রকারের মেলানিন কীভাবে ও কী পরিমাণে মিশ্রিত হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে চুলের রং কেমন হবে। কেরাটিনে স্বল্প মেলানিনের উপস্থিতি চুল পাকার অন্যতম কারণ। চুল সাদা হয়ে যায় অর্থাৎ পেকে যায় যখন কেরাটিনে কোনও মেলানিন থাকে না। অতিরিক্ত দায়িত্ব, কাজের চাপ, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদির কারণে অনেক সময় চুলের কোষে রঞ্জক পদার্থের উৎপাদন কমে যায়। তখন অল্পবয়সেও অনেক সময় চুল পেকে যায়।
ডুব সাঁতার কাটার সময় জলের নিচে কিছু দেখা যায় না কেন?
সুইমিং ক্লাবে সাঁতার কাটার পুলের জল এতটাই পরিষ্কার থাকে যে উপর থেকে জলের নিচে পুলের তলদেশ পর্যন্ত দেখা যায়। কেউ ডুব সাঁতার কাটলে তার সম্পূর্ণ গতিবিধি দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু যে ডুব সাঁতার কাটছে সে জলের নিচে ভালোভাবে কিছুই দেখতে পায় না। সবকিছুই আবছা দেখে। এর কারণ ডুব সাঁতার কাটার সময় সাঁতারুর চোখের উপর জলের একটা পাতলা আবরণ পড়ে। আমাদের চোখের প্রতিসরাঙ্ক (refractive index) আর জলের প্রতিসরাঙ্ক প্রায় সমান। ফলে জল থেকে চোখে ঢোকার সময় আলোর বিশেষ কোনও প্রতিসরণ ঘটে না। তাই রেটিনার উপর কোনও স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে না। ফলে সাঁতারু জলের নিচের কোনও কিছুই পরিষ্কার দেখতে পায় না। তবে চোখ ঢাকা চশমা পড়লে চোখ আর জলের মাঝখানে একটা হাওয়ার স্তর চশমার ভিতর আটকে থাকে। হাওয়ার প্রতিসরাঙ্ক এবং চোখের লেন্সের প্রতিসরাঙ্কের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য থাকায় আলোর ভালোরকম প্রতিসরণ ঘটে। তাই সাঁতারুও তখন জলের নিচে স্পষ্ট দেখতে পায়।
রঙিন কাচ গুঁড়ো করলে সাদা দেখতে হয় কেন?
সূর্যের আলো দেখতে সাদা হলেও তাতে সাতটা রঙ আছে—বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল। সংক্ষেপে বলা হয়, বেনীআসহকলা। কোনও বস্তুর উপরে পড়ে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে পড়লে বস্তুটিকে আমরা দেখতে পাই। রঙিন বস্তু রঙিন দেখানোর কারণ হল, সাদা আলো যখন রঙিন বস্তুটির ওপরে পড়ে, তখন সেই বস্তুটি নিজের রঙ ছাড়া বাকি ছ’টা রঙ শুষে নেয়, শুধু নিজের রঙের আলো ফিরিয়ে দেয়। রঙিন কাচের ক্ষেত্রেও ঐ একই ঘটনা ঘটে। বস্তুর গা যত মসৃণ হয়, আলোর প্রতিফলন তত নিয়মিত হয়। যত বেশি পরিমাণ রঙিন আলো আমাদের চোখে এসে পড়বে বস্তুটি তত উজ্জ্বল দেখাবে।
যেহেতু কাচের গা বা তল খুবই মসৃণ, তাই রঙিন কাচের গা থেকে কাচের রঙের আলোর প্রায় সবটুকুই প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে সরাসরি চলে আসে। কাচকে গুঁড়ো করলে তার গা অমসৃণ হয়ে যায়। তখন তার ওপর আলো পড়লে আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন হয়। এই ধরনের প্রতিফলনে বস্তুর (এক্ষেত্রে গুঁড়ো কাচের) শোষণ ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে গুঁড়ো রঙিন কাচ সবক’টি রঙকেই ছেড়ে দেয়। তখন প্রতিফলিত আলোর সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি মিলেমিশে আমাদের চোখে এসে পড়ে এবং রঙিন কাচকে আর রঙিন দেখায় না, সাদা দেখায়। তবে কাচের গুঁড়ো জলে ভেজালে তার ওপর জলের একটা আস্তরণ পড়ে এবং কিছুটা মসৃণতা ফিরে পায়। ফলে ভেজা কাচের গুঁড়োর ওপর আপতিত আলোক রশ্মির প্রতিফলন আবার অনেকটাই নিয়মিত হয় এবং রঙিন আলোর কিছুটা আমাদের চোখে এসে পড়ে। তখন রঙিন কাচের গুঁড়ো তার প্রকৃত রঙ কিছুটা ফিরে পেয়েছে বলে মনে হয়।
পিসার হেলানো মিনার পড়ে যায় না কেন?
ইতালির একটি শহরের নাম পিসা। এই শহরেই জন্মেছিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি। গ্যাললিওর জন্মের প্রায় চারশো বছর আগে এখানে তৈরি হয়েছি আটতলা বাড়ির সমান উঁচু একটি মিনার। এই মিনারের সর্বোচ্চ তলায় দাঁড়িয়ে পরীক্ষাটা করেই তো তিনি সেই বিখ্যাত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন—‘পড়ন্ত বস্তুর গতিবেগ তাহার ওজনের উপর নির্ভর করে না, ভারী ও লঘু সব বস্তুই সমান বেগে নিচের দিকে পড়ে এবং একসঙ্গেই ভূমি স্পর্শ করে।’ হ্যাঁ, একথা সবারই জানা। স্কুলের বিজ্ঞানের বইয়ে লেখা আছে।
শ্বেতপাথরের তৈরি দশাসই চেহারার এই মিনারটি পৃথিবীর এক পরম আশ্চর্য বস্তু হিসাবে পরিগণিত। আশ্চর্যজনকভাবে এটি বহুকাল যাবৎ একদিকে হেলে আছে। মিনারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১১৭৪ সালে। প্রথম তিনটে তলা ঠিকঠাকই ছিল। তারপরেই এটা একদিকে হেলতে থাকে থাকে। বর্তমানে এটা উল্লম্বতল থেকে প্রায় ৫ মিটার হেলে আছে। এতটা হেলে গিয়েও মিনারটা আজও কীভাবে দাঁড়িয়ে আছে তার উত্তর স্কুলের বিজ্ঞান বইতে লেখা আছে। কী লেখা আছে সেখানে? যা লেখা আছে সেটা হল, ‘যতক্ষণ কোনও বস্তুর ভারকেন্দ্র (Centre of gravity) দিয়ে অঙ্কিত উল্লম্ব রেখা বস্তুর তলদেশের মধ্য দিয়ে যাবে ততক্ষণ সেটা সুস্থিত (stable) থাকবে।’ মিনারটির ভারকেন্দ্রের মধ্য দিয়ে অঙ্কিত উল্লম্ব রেখাটি এখনও তার তলদেশের মধ্য দিয়েই গিয়েছে। তাই এটা এখনও পড়ে যায়নি। কিন্তু যদি এমন একদিন আসে যে, ক্রমাগত হেলে যাওয়ার দরুন উল্লম্ব রেখাটি মিনারটির তলদেশের বাইরে চলে গেছে সেদিনই এটি ভেঙে পড়বে।
কলের জল মসৃণ ধারায় পড়লে জল যত নিচে নেমে আসে ধারাটা তত সরু হয় কেন?
যেকোনও বস্তু উপর থেকে নিচে নেমে আসে অভিকর্ষজ বলের টানে। বস্তুটি যত নিচে নামে তত তার বেগ বাড়তে থাকে। কল থেকে জল পড়ার সময় ওই একই ঘটনা ঘটে। জল অসংনম্য হওয়ায় যেকোনও অনুভূমিক ছেদ (horizontal cross-section) পার হওয়ার সময় প্রতি সেকেন্ডে একই পরিমাণ জল প্রবাহিত হবে। যদি ছেদ সর্বত্র সমান থাকে তাহলে উপরের তুলনায় তলার ছেদ পাড় হওয়ার সময় বেশি পরিমাণ জলের দরকার হবে (বেগ বাড়ার দরুন) যেহেতু জলের পরিমাণ সর্বত্র সমান থাকে তাই নিচের দিকের জলের ধারার ছেদ কমে যায়। তাই বলা যায়, ভরের সংরক্ষণ সূত্রের জন্যই এমনটা ঘটে।
শীতকালে টিউবওয়েল বা কুয়োর জল রাত্রিবেলা ঠাণ্ডা অথচ ভোরবেলা গরম অনুভূত হয় কেন?
মাটির তলায় যে জল পাওয়া যায় তা ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক নিচে থাকে। সেখানে সূর্যের কোনও আলোও পৌঁছায় না। তাই মাটির তলার জলের তাপমাত্রার খুব একটা হেরফের হয় না। সারাবছর একইরকম থাকে। আবার পরিবেশের তাপমাত্রা বিভিন্ন ঋতুতে তো বটেই, দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হয়। ভোরের দিকে সবথেকে কম হয়, সন্ধ্যার দিকে সবথেকে বেশি হয়। ধরা যাক মাটির নীচের জলের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, শীতকালে ভোরের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, তাহলে তাপমাত্রার পার্থক্য হল ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এক্ষেত্রে জলের তাপমাত্রা বেশি বলে জলটা গরম মনে হবে। আবার গ্ৰীষ্মকালের কোনও দুপুরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তাহলে মাটির তলার জলের তাপমাত্রা থেকে ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেশি। এক্ষেত্রে জলটা ঠাণ্ডা মনে হবে। দেখা গেছে, কম গভীর নলকূপের তুলনায় গভীর নলকূপের জল বেশি ঠাণ্ডা হয়।
শীতকালে ঝকঝকে রোদ থাকলেও ঠাণ্ডা লাগে কেন?
বায়ু তাপের কুপরিবাহী। তাই সূর্যের তাপ যখন বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবীতে আসে তখন সেই তাপের খুব সামান্য অংশই শোষণ করতে পারে। সূর্যের তাপে ভূ-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হলে ভূমি সংলগ্ন এবং কয়েক মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বাতাস কিছুটা উত্তপ্ত হয়। কতটা উত্তপ্ত হবে তা নির্ভর করবে ওই অঞ্চলের ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণতার উপর। যেহেতু আমরা মাটির কাছাকাছি থাকি, তাই ভূ-পৃষ্ঠ যত উত্তপ্ত হয় আমরা তত গরম বোধ করি।
গ্রীষ্মকালে সূর্যের অবস্থান দক্ষিণ গোলার্ধে। সেখানে সূর্যরশ্মি ও তাপশক্তি তখন লম্বভাবে আপতিত হয়। ফলে সেখানকার মাটি যতটা উত্তপ্ত হয় উত্তর গোলার্ধের ভূ-পৃষ্ঠ ততটা হয় না। এর কারণ উত্তর গোলার্ধে তখন সূর্যের আলো ও আগত তাপশক্তি তির্যকভাবে পৌঁছায়, ফলে তাপের পরিমাণ কম থাকে। ঠিক উলটো ঘটনা ঘটে যখন সূর্য উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করে। তাই উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল হয় তখন দক্ষিণ গোলার্ধে হয় শীতকাল আর দক্ষিণ গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল তখন উত্তর গোলার্ধে শীতকাল। এই সময় অর্থাৎ শীতকালে উত্তর গোলার্ধে ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুতে পরিচলন স্রোত সৃষ্টি হয় এবং মাটির একেবারে লাগোয়া বাতাস ওপরে উঠে আসে। ভূ-পৃষ্ঠ তেমন উষ্ণ না থাকায় সেই বাতাসও তেমন গরম হয় না। এই কারণেই শীতকালে রোদে দাঁড়ালেও আমরা ঠাণ্ডা অনুভব করি।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment